খুলনা, বাংলাদেশ | ১৫ ভাদ্র, ১৪৩১ | ৩০ আগস্ট, ২০২৪

Breaking News

  বন্যায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫৪
  বৃষ্টিতে ভেসে গেল প্রথম দিনের খেলা
  মুন্সিগঞ্জ শেখ হাসিনাসহ ৬১৩ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা

যাত্রাবাড়ীর ২০ জায়গায় আগুন, নিহত ১ আহত ৬

গেজেট ডেস্ক

রাজধানীর শনির আখড়া এলাকার সহিংস পরিস্থিতি গভীর রাতেও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বুধবার দিবাগত মধ্যরাতেও সড়কে আন্দোলনকারীদের অবস্থান করতে দেখা গেছে। এতে এদিন সকাল ১০টার পর থেকে ১৫ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। রাতে শনির আখড়ার কাজলা থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, অন্তত ২০টি জায়গায় আগুন ধরিয়েছেন আন্দোলনকারীরা। এ ছাড়া সড়কের বিভিন্ন জায়গায় গাছের গুঁড়ি ও ইট ছড়িয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

এদিকে রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে হানিফ ফ্লাইওভারে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে গুলিতে সিয়াম (১৮) নামের এক তরুণ নিহত হয়েছে। বুধবার (১৭ জুলাই) মধ্যরাতে মৃত অবস্থায় তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়। তবে সিয়াম মারা গেছে নিশ্চিত হয়ে তাকে হাসপাতালের ভিতরে নেওয়া হয়নি। পরে কয়েকজন সিয়ামের মরদেহ অটোরিকশায় করে নিয়ে চলে যান। সিয়ামের গ্রামের বাড়ি ভোলার চরফ্যাশনে। সিয়াম মাতুয়াইলে ভাড়া বাসায় থাকতেন।

অপরদিকে রাত সাড়ে ১২টার দিকে শনির আখড়ার কাজলা থেকে রায়েরবাগ হয়ে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কে আন্দোলনকারীরা অবস্থান করছিলেন। অপরদিকে যাত্রাবাড়ী থানার সামনে বিপুলসংখ্যক র‌্যাব, পুলিশ, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্য সতর্ক অবস্থানে ছিলেন। কিছুক্ষণ পরপর আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করতে থাকেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। পুলিশ যখনই আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেয়, তখন তাঁরা সড়কের গলিতে দৌড়ে আশ্রয় নেন।

সন্ধ্যার পর থেকেই দুই পক্ষের মধ্যে এই অবস্থা চলছিল। এ সময়ে শুধু অ্যাম্বুলেন্স ছাড়া ওই সড়কে আর কোনো যানবাহন চলছিল না। তাতে ঢাকায় প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কে অনেকটা ভয়ের পরিবেশ তৈরি হয়।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে শরিক হয়ে শনির আখড়ার দনিয়া কলেজের শিক্ষার্থীসহ যাত্রাবাড়ীর স্থানীয় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা বুধবার সকাল ১০টায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। তখন থেকে দেশের ব্যস্ত এই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। দিনভর এমন অবস্থা চলায় সড়কে যানজট দেখা যায়। সন্ধ্যার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় পুলিশের শটগানের গুলিতে আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আনা হয়। তখন থেকে বদলে যেতে থাকে শনির আখড়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়কের চিত্র। আন্দোলনকারীরা মেয়র হানিফ উড়ালসড়কের কাজলা অংশের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেন।

পরে ছত্রভঙ্গ করার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ধাওয়া দিলে আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। আবার তাঁরা এক জোট হয়ে পাল্টা ধাওয়া দিতে থাকেন। একপর্যায়ে শনির আখড়ার কাজলা থেকে রায়েরবাগ পর্যন্ত সড়কের দুই পাশের দোকানপাট ভয়ে বন্ধ করে দেন দোকানদারেরা।

রাত সাড়ে ৯টার পর বিকল্প সড়ক দিয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কাজলা অংশে গিয়ে দেখা যায়, শতাধিক আন্দোলনকারী সড়কে অবস্থান নিয়েছেন। তাঁদের বেশির ভাগের হাতে লাঠি। সড়কের শনির আখড়া ও কাজলার মধ্যবর্তী স্থানে অন্তত পাঁচটি জায়গায় আগুন জ্বলছে। কাজলা থেকে মূল সড়ক ধরে শনির আখড়া অংশে যাওয়ার সময় দেখা যায়, সড়কে ছড়িয়ে রয়েছে ইটপাটকেল, গাছের গুঁড়ি। শনির আখড়ার সড়ক ধরে রায়েরবাগ পর্যন্ত একই চিত্র। সড়কের দুই পাশে আগুন জ্বলছে। সেখানে অবস্থান নিয়ে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা।

রাত সাড়ে ১১টায় রায়েরবাগ উড়াল পদচারী–সেতুর নিচে একদল আন্দোলনকারীকে স্লোগান দিতে দেখা যায়। এর কিছুটা দূরেও সড়কে আগুন জ্বলছিল।

সরেজমিনে দেখা গেছে, আন্দোলনকারীরা কেবল মহাসড়কের ওপর আগুন ধরাননি, তাঁরা শনির আখড়া থেকে রায়েরবাগের গলির সড়কেও আগুন ধরিয়ে দেন। এসব সড়কেও যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে সকাল থেকে সাইনবোর্ড থেকে মানুষজন হেঁটে হেঁটে যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছান।

তাসলিমা খাতুন নামের এক নারী রাত ১২টার দিকে সাইনবোর্ড থেকে হেঁটে যাত্রাবাড়ীতে পৌঁছান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি এসেছি কুমিল্লা থেকে। সাইনবোর্ডে নামিয়ে দেওয়ার পর কোনো গাড়ি পাইনি। অনেকক্ষণ সেখানে বসে ছিলাম। পরে বাধ্য হয়ে মধ্যরাতে হেঁটে যাত্রাবাড়ী যাচ্ছি।’

 

 

খুলনা গেজেট/এইচ

 




আরও সংবাদ

খুলনা গেজেটের app পেতে ক্লিক করুন

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।

© 2020 khulnagazette all rights reserved

Developed By: Khulna IT, 01711903692

Don`t copy text!